তারাবির নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল? তারাবির নামাজের গুরুত্ব।
তারাবির নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল? রমজানের এই বিশেষ ইবাদত নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি, ফজিলত, এবং পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। সহজ ভাষায় পড়ুন এবং আপনার ইবাদত আরও অর্থবহ করুন।
রমজান মাসে মুসলমানদের জন্য তারাবির নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। কিন্তু অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন থাকে: তারাবির নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ইসলামের বিভিন্ন মূলনীতি এবং হাদিসের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে হবে।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা তারাবির নামাজের গুরুত্ব, ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি, এবং এটি সুন্নত নাকি নফল তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
তারাবির নামাজের গুরুত্ব
তারাবির নামাজ মুসলমানদের জন্য রমজান মাসের এক বিশেষ উপহার। এটি সুন্নাতে মুআক্কাদাহ, অর্থাৎ গুরুত্ব সহকারে আদায় করা সুন্নত। রমজানের পবিত্র রাতগুলোতে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ এবং নিকটবর্তী হওয়ার এক অনন্য সুযোগ এটি।
তারাবির নামাজে কুরআন তিলাওয়াত শোনা হয়, যা মুমিনদের হৃদয় শীতল করে এবং আল্লাহর বাণীকে গভীরভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়। তারাবির নামাজের মূল গুরুত্ব হলো এটি আত্মশুদ্ধি, ইবাদতের গভীরতা, এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম।
রমজানের দিনগুলোতে দীর্ঘ সময় রোজা রাখার পর রাতের তারাবির নামাজ আমাদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয়। এটি শুধু শারীরিক ইবাদত নয়, বরং এটি আত্মিক প্রশান্তি ও সওয়াব অর্জনের এক মহৎ মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রাতের নামাজ (তারাবি) আদায় করে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
" (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)। এটি প্রমাণ করে যে তারাবির নামাজ আল্লাহর কাছে কতটা প্রিয়। তারাবির নামাজের মাধ্যমে মুসলমানরা রমজানের পবিত্রতা উপলব্ধি করে এবং একে জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হিসাবে গ্রহণ করে। এটি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলা আনতে সহায়ক এবং রাতের ইবাদত আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করে।
তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত তারাবির নামাজ নিয়মিত আদায় করা এবং এর বরকত লাভ করা। রমজানের এই বিশেষ ইবাদতের মাধ্যমে আমরা পার্থিব ও পরকালীন সফলতা অর্জনের আশা করতে পারি।
তারাবি নামাজের ফজিলত
- গুনাহ মাফের সুযোগ: তারাবি নামাজ রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বিশেষ মাধ্যম। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিনরা গুনাহ মাফের সুযোগ লাভ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রাতের নামাজ আদায় করে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়" (সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম)। এই হাদিস তারাবির নামাজের গুরুত্বকে স্পষ্ট করে তোলে। তারাবি নামাজ আত্মার পরিশুদ্ধি, আত্মসমর্পণ এবং আল্লাহর রহমত অর্জনের এক উত্তম পথ। এ নামাজ মুমিনদের ঈমান শক্তিশালী করে এবং জীবনে পাপ থেকে বিরত থাকার প্রেরণা যোগায়। তাই তারাবি নামাজ প্রতিটি মুসলমানের জন্য একটি মূল্যবান ইবাদত।
- কুরআনের তিলাওয়াত: তারাবি নামাজের অন্যতম বড় ফজিলত হলো কুরআনের তিলাওয়াত শ্রবণ ও উপলব্ধি করার সুযোগ। রমজানের এই বিশেষ ইবাদতে ইমামরা পুরো কুরআন তিলাওয়াত করেন, যা মুমিনদের হৃদয়কে আল্লাহর বাণীর সৌন্দর্যে মোহিত করে। কুরআনের আয়াতগুলো শোনার মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর নির্দেশ ও শিক্ষা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করে। এই তিলাওয়াত আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটায় এবং জীবনে আল্লাহর পথ অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করে। তারাবির মাধ্যমে মুমিনরা কুরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা ঈমানকে দৃঢ় করে এবং আল্লাহর রহমত লাভে সহায়ক হয়। তাই তারাবি নামাজ কুরআনের তিলাওয়াত শ্রবণের এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়।
- আল্লাহর নৈকট্য: তারাবি নামাজ মুমিনদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক অনন্য সুযোগ। এই ইবাদত রমজানের রাতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজের আত্মাকে নিবেদন করার মাধ্যম। তারাবি নামাজের মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করে এবং হৃদয় আল্লাহর ভয়ে পরিপূর্ণ হয়। এ নামাজে একাগ্রতার সঙ্গে দাড়ানোর মাধ্যমে মুমিনরা তাদের পাপের ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং জান্নাতের প্রতি আশা রাখে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "রমজানের রাতে ঈমান ও সওয়াবের আশায় যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হয়।" তারাবি নামাজ মুমিনদের জীবনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও নৈকট্যের অনুভূতি বৃদ্ধি করে।
তারাবি নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি
তারাবি নামাজের ঐতিহাসিক পটভূমি ইসলামের প্রাথমিক যুগের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এটি মূলত রমজান মাসের রাতের বিশেষ নামাজ, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে আদায় করতেন এবং সাহাবিদেরও আদায় করতে উৎসাহিত করতেন।
হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের রাতগুলোতে মসজিদে জামাতে তারাবি নামাজ আদায় করতেন, তবে তিনি নিয়মিতভাবে সবাইকে জামাতে অংশগ্রহণে বাধ্য করেননি। এক পর্যায়ে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, তারাবি নামাজ যদি জামাতের মাধ্যমে নিয়মিত আদায় করা হয়, তবে তা উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে যেতে পারে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে তারাবি নামাজের একটি সংগঠিত রূপ প্রদান করা হয়। তিনি লক্ষ্য করেন যে, মদিনার মানুষ বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তারাবি নামাজ আদায় করছে। তখন তিনি সকলকে একত্রিত করে একজন ইমামের পেছনে তারাবি নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেন।
এই ব্যবস্থাপনায় তারাবি নামাজ জামাতে আদায় করার ঐতিহ্য শুরু হয়, যা আজও মুসলিম বিশ্বের সব স্থানে পালিত হয়। তারাবি নামাজ ইসলামের ঐতিহ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে, কারণ এটি কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর বাণীর গভীরতা উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়।
তারাবি নামাজ কেবল ইবাদতের একটি মাধ্যম নয়, বরং এটি মুসলিম সমাজে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের এই বিশেষ ইবাদত ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়, যা প্রতিটি যুগে মুসলমানদের জীবনে আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর নির্দেশ পালনের প্রেরণা জুগিয়েছে।
তারাবির রাকাত সংখ্যা
তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কিছু মতভেদ থাকলেও এটি মূলত ইসলামের ঐতিহ্য এবং ফিকহের ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে ভিন্নতায় রূপ নিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবি নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করেননি।
তিনি সাধারণত আট রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন এবং এর পরে তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন। তবে, তিনি কখনো এটিকে বাধ্যতামূলক করেননি এবং তার সাহাবিরা তাঁদের সামর্থ্য ও সুযোগ অনুযায়ী নামাজ আদায় করতেন।হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে মদিনার মসজিদে নববিতে বিশ রাকাত তারাবি নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা চালু হয়।
এটি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠিত রূপ লাভ করে এবং বহু যুগ ধরে এটি প্রচলিত রয়েছে। বিশেষত, হানাফি মাযহাবসহ অনেক মাযহাবে বিশ রাকাত তারাবি নামাজই সুন্নাত হিসেবে পালন করা হয়। অন্যদিকে, মালেকি এবং শাফি মাযহাবে এই সংখ্যাটি ভিন্ন হতে পারে, এবং তারা ঐতিহাসিক রেওয়ায়েত অনুসারে আট রাকাতও আদায় করতে পারে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের চেয়ে এর গুরুত্ব ও ফজিলত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একটি বিশেষ ইবাদত, যা কুরআন তিলাওয়াত, আত্মশুদ্ধি এবং গুনাহ থেকে মুক্তির একটি মহৎ সুযোগ। সুতরাং, প্রতিটি মুসলিম তার সামর্থ্য অনুযায়ী তারাবি নামাজ আদায় করতে পারে।
মূল বিষয় হলো, ইবাদতের প্রতি একাগ্রতা ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, যা রাকাত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল?
তারাবির নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা রমজান মাসের রাতগুলোতে আদায় করা হয়। তবে এটি সুন্নত নাকি নফল, এ বিষয়ে ইসলামিক পণ্ডিতদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। বেশিরভাগ ইসলামিক স্কলার এবং চার মাযহাবের অনুসারীরা একমত যে, তারাবি নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদাহ, অর্থাৎ এটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আদায়যোগ্য সুন্নত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবি নামাজ আদায় করতেন এবং সাহাবিদেরও আদায় করতে উৎসাহিত করতেন। হাদিসে উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রাতের নামাজ (তারাবি) আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম)
অন্যদিকে, কিছু পণ্ডিত তারাবি নামাজকে নফল ইবাদত হিসেবেও বিবেচনা করেছেন, যার অর্থ এটি বাধ্যতামূলক নয়। তবে এটি সুন্নত হওয়ায় এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের এক মহৎ মাধ্যম এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক। তারাবি নামাজের মাধ্যমে কুরআন তিলাওয়াত শোনা হয়, যা আত্মার প্রশান্তি এনে দেয় এবং রমজানের বিশেষত্বকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
তবে তারাবি নামাজ আদায় করা মুসলমানদের জন্য বিশেষ নেকির সুযোগ। এটি আদায় না করলেও কোনো গুনাহ হয় না, তবে এর সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং, মুমিনদের উচিত এই নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা এবং এর ফজিলত অর্জন করা। তারাবি নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং পাপ থেকে মুক্তির আশা করতে পারি।
সুন্নত ও নফলের মধ্যে পার্থক্য
- সুন্নত: যে কাজ নবী করিম (সা.) নিয়মিতভাবে করতেন এবং মুসলমানদের জন্য এটি অনুসরণীয়। উদাহরণ: তারাবির নামাজ।
- নফল: ঐচ্ছিক ইবাদত যা করলে সওয়াব পাওয়া যায় কিন্তু না করলে গুনাহ হয় না।
তারাবি নামাজের বিধান ইসলামিক স্কলারদের মতে
হানাফি মাজহাবের দৃষ্টিভঙ্গি
তারাবি নামাজ সম্পর্কে হানাফি মাজহাবের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্ট এবং সুন্নতে মুআক্কাদাহ হিসেবে স্বীকৃত। হানাফি মাজহাব অনুসারে, রমজান মাসে তারাবি নামাজ আদায় করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এটি রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং খলিফা উমর (রা.)-এর আমল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। হানাফি পণ্ডিতরা বিশ রাকাত তারাবি নামাজকে সুন্নত হিসেবে গ্রহণ করেছেন, যা মসজিদে জামাতের মাধ্যমে আদায় করা উত্তম।
হানাফি মাজহাবের মতে, তারাবি নামাজ রমজানের রাতের বিশেষ ইবাদত, যা কুরআন তিলাওয়াত এবং আত্মশুদ্ধির জন্য একটি সুযোগ। খলিফা উমর (রা.)-এর নির্দেশে বিশ রাকাত তারাবি নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা চালু হয়, যা হানাফি মাযহাবে ব্যাপকভাবে পালিত হয়। হাদিসের আলোকে হানাফি আলেমরা মনে করেন, এটি এমন একটি ইবাদত যা গুনাহ মাফের মাধ্যম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
হানাফি মাজহাব অনুসারে, তারাবি নামাজের গুরুত্ব এমন যে, এটি আদায় না করলে গুনাহ না হলেও একজন মুসলিম এর অমূল্য সওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তাই মুমিনদের উচিত বিশ রাকাত তারাবি নামাজ নিয়মিতভাবে আদায় করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা।
শাফি মাজহাবের দৃষ্টিভঙ্গি
শাফি মাজহাবের দৃষ্টিতে তারাবি নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদাহ, অর্থাৎ এটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আদায়যোগ্য একটি ইবাদত। শাফি আলেমদের মতে, রমজান মাসের রাতগুলোতে তারাবি নামাজ আদায় করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি মুমিনদের জন্য গুনাহ মাফ, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ প্রদান করে।
শাফি মাজহাব অনুসারে, তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা সাধারণত আট থেকে বিশ রাকাতের মধ্যে হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ রাকাত আদায় করা সুন্নত হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং তা জামাতের সঙ্গে আদায় করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শাফি মাজহাবে তারাবি নামাজে কুরআন তিলাওয়াত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এই তিলাওয়াত ইবাদতের গভীরতা বাড়ায় এবং মুমিনদের আল্লাহর বাণীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়ক হয়। শাফি পণ্ডিতরা মনে করেন, তারাবি নামাজ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখার একটি উত্তম মাধ্যম। এ মাযহাব অনুসারে, তারাবি নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করলে মুসলিম সমাজের ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য জোরদার হয়।
এটি আদায় করা সুন্নতে কিফায়াহও হতে পারে, যেখানে কিছু লোক জামাতে নামাজ আদায় করলে অন্যরা দায়মুক্ত হয়। তবে, তারাবির বিশেষ ফজিলত অর্জনে প্রতিটি মুসলিমের ব্যক্তিগত উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যান্য মাজহাবের মতামত
তারাবি নামাজের বিষয়ে ইসলামের অন্যান্য মাজহাবের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা ভিন্ন হলেও মূলত এটি সুন্নতে মুআক্কাদাহ হিসেবে গণ্য হয়। মালিকি মাজহাব অনুসারে, তারাবি নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত, যা সাধারণত ৮ থেকে ২০ রাকাত পর্যন্ত আদায় করা হয়। তবে, মসজিদে জামাতে আদায় করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
মালিকি মাজহাবে কুরআন তিলাওয়াতের গভীরতা এবং ধীরস্থিরতার ওপর জোর দেওয়া হয়। হাম্বলি মাজহাবের দৃষ্টিকোণ থেকে তারাবি নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদাহ এবং এটি রমজানের রাতের বিশেষ ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। হাম্বলি আলেমরা সাধারণত ২০ রাকাত তারাবি নামাজকে সুন্নত হিসেবে দেখেন, তবে ব্যক্তি ইচ্ছা করলে এর কম বা বেশি আদায় করতে পারেন।
হাম্বলি মাজহাবে তারাবি নামাজে দীর্ঘ কুরআন তিলাওয়াত এবং একাগ্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য মাজহাবের মতো, জাফরি শিয়া মাজহাবেও তারাবি নামাজ একটি বিশেষ ইবাদত হিসেবে পালন করা হয়। তবে, এটি তাদের দৃষ্টিতে সুন্নতের পরিবর্তে নফল ইবাদত হিসেবে বেশি গুরুত্ব পায়।
সর্বশেষে, মাজহাবের ভিন্নতা সত্ত্বেও তারাবি নামাজের মূল উদ্দেশ্য একই—আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, গুনাহ মাফ এবং আত্মশুদ্ধি। প্রতিটি মাজহাবেই তারাবি নামাজ একটি মূল্যবান ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়, যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং আত্মিক উন্নতির পথ প্রশস্ত করে।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
নিয়ত
তারাবি নামাজ পড়ার আগে নিয়ত করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ: “আমি তারাবির দুই রাকাত নামাজ আদায় করছি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।”
তিলাওয়াত
প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে যেকোনো একটি সূরা পড়া হয়।
সালাম দেওয়া
প্রতি দুই রাকাত শেষে সালাম দিতে হয়।
তারাবি নামাজের উপকারিতা
FAQ
-
প্রশ্ন: তারাবির নামাজ কি ফরজ?উত্তর: না, এটি সুন্নতে মুআক্কাদা।
-
প্রশ্ন: তারাবি কখন পড়া হয়?উত্তর: ঈশার নামাজের পরে।
-
প্রশ্ন: তারাবি পড়ার সর্বনিম্ন রাকাত কত?উত্তর: ৮ রাকাত।
-
প্রশ্ন: মসজিদে না গিয়ে ঘরে পড়া যাবে কি?উত্তর: হ্যাঁ, ঘরে পড়া যাবে। তবে জামাতে পড়া উত্তম।
-
প্রশ্ন: তারাবি কি মহিলারা পড়তে পারবেন?উত্তর: হ্যাঁ, মহিলারাও তারাবি পড়তে পারবেন।
-
প্রশ্ন: তারাবির নামাজে কুরআন খতম করা কি জরুরি?উত্তর: না, এটি ঐচ্ছিক।
-
প্রশ্ন: তারাবি কি রোজা ভাঙার জন্য পড়া হয়?উত্তর: না, এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
-
প্রশ্ন: তারাবি পড়ার সময় কোন সূরা পড়া উত্তম?উত্তর: যেকোনো সূরা পড়া যাবে।
-
প্রশ্ন: হজরত উমর (রা.) কেন জামাতে তারাবি পড়ার প্রচলন করেন?উত্তর: মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য।
-
প্রশ্ন: তারাবি পড়ার সময় কি দীর্ঘ সূরা পড়তে হবে?উত্তর: না, ছোট সূরা পড়া যাবে।