২০২৫ সালের রমজানের সময়সূচি - সেহরি ও ইফতার টাইম
২০২৫ সালের রমজানের সময়সূচি জানতে চান? এখানে পাবেন সেহরি ও ইফতারের সময়, রোজার ফজিলত, করণীয়-বর্জনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। বিস্তারিত জানতে পড়ুন।
রমজান ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম মাস, যা সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫ সালের রমজানের সময়সূচি জানতে চান? এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়, রমজানের ফজিলত, করণীয়-বর্জনীয় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি পড়ুন।
রমজান ২০২৫ কবে শুরু হবে?
২০২৫ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ২ মার্চ ২০২৫। তবে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারিত হবে।
রমজান ২০২৫ সালের সময়সূচি (বাংলাদেশ)
২০২৫ সালে বাংলাদেশে পবিত্র রমজান মাস চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে শুরু হবে। সাধারণত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ চাঁদ দেখার পর রমজানের সঠিক তারিখ ঘোষণা করে। তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ইসলামিক পঞ্জিকার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ২ মার্চ।
এই তারিখ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল, তাই চাঁদ দেখা সাপেক্ষে একদিন আগে বা পরে হতে পারে।রমজান মাসে সঠিক সময়ে সেহরি ও ইফতার করা রোজাদারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতি বছর সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য আলাদা হতে পারে।
ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার জন্য নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, রমজান মাসের প্রথম দিন সেহরির শেষ সময় ভোর ৫:০৪ মিনিট এবং ইফতারের সময় সন্ধ্যা ৬:০২ মিনিট। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সময়সূচি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তাই স্থানীয় মসজিদ বা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত।
রমজান মাস ২৯ বা ৩০ দিন হতে পারে, যা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, রমজান মাস শেষে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়, যা ২০২৫ সালে ১ বা ২ মার্চ হতে পারে। তবে, সঠিক তারিখ চাঁদ দেখার পরই নিশ্চিত করা যাবে।
রমজান মাসে রোজা পালন ছাড়াও মুসলমানরা বেশি বেশি ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। এই মাসে সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি মেনে চলা রোজাদারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রোজার শুদ্ধতা ও পূর্ণতা নিশ্চিত করে।
সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য পেতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ওয়েবসাইট বা স্থানীয় মসজিদের ঘোষণার প্রতি নজর রাখা উচিত। এছাড়া, স্থানীয় সময়ের পার্থক্য বিবেচনা করে সেহরি ও ইফতারের সময় নির্ধারণ করা উচিত, কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সময়ের সামান্য পার্থক্য থাকতে পারে।
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ইবাদতের মাস। সঠিক সময়ে সেহরি ও ইফতার গ্রহণ করে রোজা পালন করা এই মাসের অন্যতম প্রধান করণীয়। তাই, সঠিক সময়সূচি সম্পর্কে অবগত থাকা এবং তা মেনে চলা প্রতিটি রোজাদারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত
রমজান হলো ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম মাস, যা মুসলমানদের জন্য বিশেষ ফজিলত ও বরকতের মাস হিসেবে বিবেচিত। এই মাসে রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, যা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য ফরজ।
রমজান আত্মসংযম, ইবাদত, ক্ষমা প্রার্থনা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক অনন্য সুযোগ। এই মাসের বিশেষত্ব হলো, এতে আল-কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম পথপ্রদর্শক।রমজানের অন্যতম গুরুত্ব হলো তাকওয়া অর্জন, যা মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
রোজার মাধ্যমে একজন মুসলমান শারীরিক ও আত্মিকভাবে সংযমী হয়ে ওঠে এবং খারাপ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করার সুযোগ পায়। রোজা শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম নয়, বরং চোখ, কান, মুখ ও অন্তরকেও সকল প্রকার পাপ থেকে সংযত রাখার শিক্ষা দেয়।
এটি মানুষকে ধৈর্যশীল হতে শেখায় এবং আত্মশুদ্ধির পথে পরিচালিত করে। রমজান মাসের ফজিলতের কথা বলতে গেলে, এটি এমন একটি মাস যেখানে একটি নফল ইবাদত ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব অর্জন করে এবং একটি ফরজ ইবাদত ৭০ গুণ বেশি সওয়াব লাভ করে।
এই মাসে শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়, ফলে মানুষ সহজেই নেক আমলের দিকে ধাবিত হতে পারে। রমজান এমন একটি মাস, যখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ থাকে।
রমজানের সবচেয়ে মহিমান্বিত রাত হলো লাইলাতুল কদর, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে এবং এ রাতের ইবাদত মানুষকে অগণিত সওয়াব এনে দেয়। আল্লাহ তায়ালা এ রাতে তাঁর বান্দাদের জন্য অসীম রহমত ও মাগফিরাত দান করেন।
যারা এই রাতের ইবাদতে লিপ্ত থাকে, তারা মহান পুরস্কারে ভূষিত হয়। রমজান দান-সদকার একটি উত্তম সময়, কারণ রাসুল (সা.) এই মাসে সব সময়ের চেয়ে বেশি দান করতেন। গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানো, ক্ষুধার্তকে আহার করানো এবং ইফতার করানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ।
এই মাসে দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সুযোগ থাকে, তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত বেশি বেশি দোয়া ও ইবাদতে মনোযোগী হওয়া। অর্থাৎ, রমজান শুধুমাত্র রোজা রাখার জন্য নয়; এটি মানুষকে সংযম, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর রহমত লাভের মাস।
যারা এই মাসের ফজিলত বোঝে এবং যথাযথভাবে ইবাদতে মগ্ন হয়, তারা পার্থিব ও পরকালীন জীবনে সফলতা লাভ করে।
রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়
রমজান হলো আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও সংযমের মাস, যেখানে মুসলমানরা রোজা পালন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। এই মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় রয়েছে, যা সঠিকভাবে মেনে চললে রোজার পূর্ণতা অর্জিত হয়।
রমজানে করণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যথাযথভাবে রোজা পালন করা এবং আল্লাহর ইবাদতে মনোযোগী হওয়া। সুবহে সাদিকের আগে সেহরি খেয়ে রোজা শুরু করা সুন্নত, যা শারীরিকভাবে উপকারি এবং রাসুল (সা.) এর অনুসরণও বটে।
দিনের বেলা রোজা অবস্থায় নামাজ আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, দান-সদকা করা ও বেশি বেশি দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রমজানে ইফতার করানোকে অনেক পুণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়, কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করায়, সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করে।
রমজান শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম নয়; এটি আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। তাই এ সময় মিথ্যা বলা, পরনিন্দা করা, খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি। রোজা থাকা অবস্থায় রাগ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, অপব্যয় করা এবং অহেতুক সময় নষ্ট করাও উচিত নয়।
বিশেষত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় সময় ব্যয় না করে ইবাদত ও কল্যাণকর কাজে মনোযোগী হওয়া উচিত। রমজানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো তাকওয়া অর্জন করা, যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর ভয় ও সন্তুষ্টির দিকে ধাবিত হয়।
তাই রোজা রেখে যদি কেউ পাপাচারে লিপ্ত হয়, তাহলে তার রোজার পূর্ণতা নষ্ট হতে পারে। রমজান মাসে পাপ থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি উত্তম চরিত্র গঠনে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যাতে পুরো জীবনের জন্য এটি একটি প্রশিক্ষণ হয়ে ওঠে।
এছাড়া, রমজানের বিশেষ ইবাদতের মধ্যে তারাবির নামাজ অন্যতম, যা রাতে আদায় করা হয়। শেষ দশ দিনে লাইলাতুল কদর খোঁজার জন্য বেশি বেশি ইবাদত করা সুন্নত। যারা রমজানের রোজা রাখতে সক্ষম, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙে ফেলেন বা রাখেন না, তারা বড় ধরনের গুনাহগার হন।
রমজান হলো আত্মসংযম, সহমর্মিতা ও আত্মশুদ্ধির মাস। এ সময় শুধু না খেয়ে থাকার মধ্যে রোজার মাহাত্ম্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং একজন রোজাদার যদি সকল খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রেখে আল্লাহর পথে অটল থাকেন, তবে তার জন্য রমজান সত্যিকারের কল্যাণ বয়ে আনবে।
বিশ্বব্যাপী রমজানের সময়সূচি
বিশ্বব্যাপী রমজানের সময়সূচি নির্ভর করে চন্দ্র ক্যালেন্ডারের উপর, যা ইসলামিক বর্ষপঞ্জির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। ইসলামিক ক্যালেন্ডার চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে প্রতিটি দেশের সময়সূচি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
সাধারণত, সৌদি আরব চাঁদ দেখার ভিত্তিতে প্রথম রমজানের তারিখ ঘোষণা করে, যা অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। তবে, বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রমজানের সময়সূচি নির্ধারণ করে থাকে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও ওমানের মতো দেশগুলোতে সাধারণত একদিন আগে রোজা শুরু হয়, কারণ এখানে চাঁদ দেখা সহজ হয় এবং সরকারি পর্যায়ে সেটি নিশ্চিত করা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেমন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় চাঁদ একদিন পরে দেখা যায়, ফলে এসব দেশে রমজান মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় একদিন পর শুরু হয়। ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে মুসলিম সম্প্রদায় স্থানীয় ইসলামিক সেন্টার ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর মাধ্যমে চাঁদ দেখার ঘোষণা অনুসরণ করে।
অনেক দেশে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ক্যালকুলেশনের (জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গণনা) মাধ্যমেও রমজানের শুরুর দিন নির্ধারণ করা হয়। ফলে কখনো কখনো কিছু দেশে স্থানীয় পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী তারিখের অল্প পার্থক্য দেখা যেতে পারে।
রমজানের সময়সূচি মূলত সেহরি ও ইফতারের সময়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। নিকটবর্তী অঞ্চলগুলোর মধ্যে সময়ের সামান্য পার্থক্য থাকলেও, কিছু দেশ নিজস্ব সময়সূচি প্রকাশ করে যাতে মুসলিম জনগণ সহজে তাদের সেহরি ও ইফতারের সময় জানতে পারে।
মক্কা, মদিনা ও জেরুজালেমের মতো ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সেহরি ও ইফতারের সময়সূচির প্রতি বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের বিশেষ আগ্রহ থাকে। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর মধ্যে দিনের দৈর্ঘ্যের পার্থক্যের কারণে রোজার সময়ও ভিন্ন হয়ে থাকে।
নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ডের মতো দেশে যেখানে গ্রীষ্মকালে দিন অনেক দীর্ঘ হয়, সেখানে বিশেষ ধর্মীয় নির্দেশনা অনুসারে রোজার সময় নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে রোজার সময় তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
বিশ্বের মুসলিমরা স্থানভেদে আলাদা সময়ে রোজা রাখলেও, রমজানের মূল উদ্দেশ্য আত্মশুদ্ধি ও ইবাদত করা, যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অভিন্ন।